May 4, 2024

Diploma in Medical Assistant Training Course (MATS)

ম্যাটস (ডিএমএফ) কি এবং কেন…??

 

ম্যাটস (MATS) শব্দের অর্থ হলো ডিপ্লোমা অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ইন মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স। বাংলাদেশের গ্রামীন পর্যায়ে জনগনের চিকিৎসা ও পরিবার—পরিকল্পনা সেবার অংশ হিসাবে গড়ে তোলা এই কোর্স। ১৯৭৬ সালে সরকার গ্রামীন জনগনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মধ্যমমানের চিকিৎসক তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে সরকার ৩ বৎসর মেয়াদী ডিপ্লোমা অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ইন মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট (ডি.এম.এফ) কোর্স নামে একটি কোর্স চালু করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ থেকে ডিপ্লোমা প্রাপ্ত এই চিকিৎসকগন বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক রেজিষ্ট্রেশন/লাইসেন্স প্রাপ্ত মধ্যম—মানের চিকিৎসক। ১৯৭৬ সালে এই কোর্স চালুর পর ১৯৭৯ সাল থেকে গ্রাম, ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান কেও আসছেন এই ডিপ্লেমা চিকিৎসকরা। গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ তাদের স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে একমাত্র DMF (MATS) কোর্স সম্পন্নকারী চিকিৎসকদেরই দারস্থ হয়। ফলে DMF (MATS) উত্তীর্ণ এই চিকিৎসকদের গ্রামীন মানুষের পাশে থেকে তাদেও চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ অনেকটাই অবধারিত।

DMF (MATS) চার (০৪) বৎসর মেয়াদী একটি শিক্ষাক্রম। চূড়ান্তভাবে কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণলায়ের অধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ সনদ প্রদানকরে থাকে। সরকারি কিংবা বে—সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীকেই সমমানের ডি.এম.এফ ডিগ্রী প্রদান করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে MBBS ডিগ্রী সবচেয়ে বেশী পরিচিত। কোন মেডিকেল কলেজ থেকে MBBS ডিগ্রী গ্রহণ করা থাকলেও সরাসরি ডাক্তার  হিসাবে প্রাকটিস করা যায়না। ডাক্তার হিসেবে প্র্যাকটিস করতে হলে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। এই নিবন্ধন পেলেই ডাক্তার হিসেবে কাজ শুরু করা যায়। DMF (MATS) কোর্স করেও BM&DC নিবন্ধন নিয়ে নির্ধারিত সীমাবদ্ধতায় ডিপ্লোমা ডাক্তার হিসেবে কাজ শুরু করা যায়।  এক্ষেত্রে স্বল্প সময়ে অল্পশিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের রয়েছে অনেক সুযোগ। যেমন: সরকারী চাকুরীতে উচ্চতর ১১তম গ্রেডে (প্রস্তাবিত ১০ গ্রেডে) নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখার সুযোগ। ইহা ছাড়াও MATS উত্তীর্ণ হবার পর স্বায়ত্ব শাসিত ও বেসরকারি পর্যায় ছাড়াও বিভিন্ন NGO তে রয়েছে চাকুরীর অপূর্ব সুযোগ। যেমন— তিতাস গ্যাস, বাংলাদেশ বিমান, সিটি কর্পোরেশন, সেভ দ্যা চিলড্রেন, কেয়ার, কারিতাস, ব্রাকইত্যাদি ছাড়াও অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়োগ নীতি অনুসারে তাদের বেতন ভাতাদি ও পদবী প্রদান করে থাকে। ইহা ছাড়া গঅঞঝ উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খুব কাছে যাওয়া যায়। ফলে আর্ত—মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োগ করার একটা সুযোগ থাকে। এতে করে সাধারণ মানুষের সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়াযায়। DMF (MATS) উত্তীর্ণ হলে উচ্চ শিক্ষার পথও অনেকটা উন্মুক্ত হয়। আমাদের দেশে কিছু কিছু বিশ^বিদ্যালয় গঅঞঝ উত্তীর্ণদেও জন্য বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

 

ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পাকিস্তানের জন্মের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে Training of Licentiate Medical Faculty (LMF) কোর্স চলছিল। পূর্ব পাকিস্তানের বোর কমিটি তৎকালীন এল.এম.এফ কোর্স বন্ধের মাধ্যমে মেডিকেল স্কুল গুলোকে মেডিকেল কলেজে রুপান্তর কেও গইইঝ কোর্স চালু করা হয়। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে এল.এম.এফ চিকিৎসকদের জন্য কনডেনস্ড গইইঝ কোর্স চালু করেন ১৯৬৩ সাল থেকে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর এল.এম.এফ. কোর্স বন্ধ করে দেয়ায় গ্রাম বাংলা চিকিৎসকশূন্য হয়ে যায়। ফলে গ্রামের মানুষ ঝাড়—ফুঁক, কবিরাজ, ওঝা নির্ভও হয়ে পড়ে। ১৯৭৩ সালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমন এর সরকার প্রথম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনায় ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট নামে একটি নতুন কোর্স তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং ইনস্টিটিউট এর নাম করণ করা হয় মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই কোর্স চালুকরা হয়। ১৯৮০ সালে মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্টদের প্রথম ব্যাচ সরকারী চাকুরিতে যোগদান করে। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বি.এম.ডি.সি) মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্টদের রেজিষ্ট্রেশন দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দেশের মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগ গ্রামীন জনগোষ্ঠী বর্তমানে উপ—সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার/ডি.এম.এফ. (ম্যাটস) চিকিৎসকদেও নিকট হইতে চিকিৎসা গ্রহণ করে।

২০০৯ সালে মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট (ডি.এম.এফ) কোর্সকে ৪ বছরে (তিন বছর একাডেমিক + ১ বছর ইন্টার্ণশীপ) উন্নীত করা হয়। দেশে বর্তমানে ৯ টি সরকারি মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ও ২০০ টি বেসরকারি মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে উক্ত কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। তন্মধ্যে ট্রমা ম্যাটস, শ্যামলী ম্যাটস, টা্ঙ্গাইল ম্যাটস ও দেশের একমাত্র মহিলা ম্যাটস ট্রমা উইমেন্স ম্যাটস তাদের শিক্ষার মান খেলা—ধুলা, সাংস্কৃতি ককর্মকান্ড, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী প্রশিক্ষণ যেমন: বিভিন্ন হাসপাতালে মাঠ প্রশিক্ষণ, ওয়ার্ড প্লেসমেন্ট, শিক্ষামূলক ভ্রমণ ছাড়াও সফল ডি.এম.এফ চিকিৎসকদের নানা মুখি অভিজ্ঞতার আলোকে ছাত্র—ছাত্রীদের জীবন মান উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হয়। সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে ট্রমা ম্যাটস, শ্যামলী ম্যাটস, টা্ঙ্গাইল ম্যাটস ও ট্রমা উইমেন্স ম্যাটস দেশের সকল ম্যাটস এর চেয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে।

 

ডি.এম.এফ (মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট) দের পরিসংখ্যান: ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৫ হাজার সরকারী নিয়োগ প্রাপ্ত উপ—সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট) ছিল। সরকারী প্রতিষ্ঠানে ২০১২—২০১৩ সেশনে ৭১৬ জন শিক্ষার্থী পাশকরে বের হওয়ার কথা। অথচ দেশে এর চেয়ে অনেক বেশী ডিপ্লোমা চিকিৎসকের প্রয়োজন ছিল। কাজেই ম্যাটস/ডিএমএফ ডিগ্রী অর্জন করলে চাকুরীর সুযোগ অনেকটাই অবধারিত এ কথা বলাই যায়। যারা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন কিন্তু মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি.এস কোর্স এ সুযোগ পাননি তারাও ম্যাটস কোর্স কেও ডি.এম.এফ চিকিৎসক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।